আল্লাহ আখেরাত দিবস (পরকাল) ও নবুয়ত পরম্পরার প্রতি ঈমান আনার পর যেসব বিষয়ের দাওয়াত কোরআন মাজীদ বিশেষ গুরুত্ব সহকারে দিয়েছে এবং সেগুলোকে বলতে গেলে মানুষের কল্যাণ ও সৌভাগ্যের চাবিকাঠি হিসেবে বর্ণনা করেছে, তন্মধ্যে একটি হলো তাকওয়া বা পরহেজগারী। তাকওয়ার আসল তাৎপর্য হলো এই যে, বান্দা আল্লাহ তায়ালা ও আখেরাত দিবসের প্রতি নিশ্চিত বিশ্বাস সহকারে আল্লাহ তায়ালার অসন্তোষ, তার পাকড়াও, আখেরাতের আযাব ও হিসাব-কিতাবের ভয়ে সতর্ক-সংহত জীবনযাপন করবে।
মহানবী সা.-এর প্রখ্যাত সাহাবী হযরত উবাই ইবনে কা’ব রা. যিনি ইলমে কোরআন বিশেষ ব্যুৎপত্তি ও দক্ষতার অধিকারী ছিলেন (এবং স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সা.ও জ্ঞানের ক্ষেত্রে যার বিশেষ মর্যাদার কথা প্রত্যয়ন করেছেন)। একদিন আমীরুল মুমিনীন হযরত ওমর রা. তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তাকওয়া (তথা পরহেজগারী)-এর তাৎপর্য কি? হযরত উবাই রা. বললেন, ‘কখনও কণ্টাকাকীর্ণ পথ চলার সুযোগ তো অবশ্যই আপনার হয়ে থাকবে।’ হযরত ওমর রা. বললেন, ‘বিলক্ষণ; বহুবার এমন পথ চলার সুযোগ হয়েছে।’
হযরত উবাই রা. বললেন, ‘তখন আপনি কি করেছেন?’ হযরত ওমর রা. বললেন, ‘আমি আমার দেহ ও পরিধেয় কাপড়চোপড়কে কাঁটা থেকে বাঁচিয়ে অক্ষত বেরিয়ে যেতে পারি।’ হযরত উবাই রা. বললেন, ‘ফাজালিকাত তাকওয়া’। (এটিই হলো তাকওয়ার তাৎপর্য)। (ইবনে কাসীর : ১ম খন্ড, পৃ. ৪০)। আসলে তাকওয়ার এর চাইতে সালঙ্কার ও উত্তম ব্যাখ্যা আর কিছুই হতে পারে না।
কোরআন মাজীদের যেসব আয়াতে তাকওয়া বা পরহেজগারী অবলম্বনের উপদেশ ও তাকিদ করা হয়েছে, সেসবগুলো গণনা করাও কঠিন। এ সম্পর্কিত কয়েকটি মাত্র আয়াত এখানে পেশ করা হলো। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় করো যেমনটি তাকে ভয় করা উচিত। আর (শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এ তাকওয়ার ওপর স্থির থেকে মনেপ্রাণে নিজের সে মালিকের আনুগত্য করতে থাক এমনকি) সেই আনুগত্যের অবস্থায়ই যেন তোমার মৃত্যু আসে।’ (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১০২)।
অর্থাৎ, যে আল্লাহ তায়ালার সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা এবং যার হাতে জীবন ও মৃত্যুর যাবতীয় ব্যবস্থাপনা। যিনি অপরিসীম করুণা ও রহমতের অধিকারী এবং যার পরাক্রম ও রোষেরও কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। এমনি মালিককে বান্দার যেভাবে ভয় করা কর্তব্য, ঈমানদাররা তাকে সেভাবেই ভয় করে থাকবে। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তার আনুগত্য করতে থাকবে।
সূরা তাগাবুনে এ বিষয়টিই এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে, ‘আল্লাহকে ভয় করা এবং তাকওয়া (পরহেজগারী) অবলম্বন করো যতটা তোমাদের দ্বারা সম্ভব। আর মনেপ্রাণে তার যাবতীয় নির্দেশ শোন ও পালন করো।’ (সূরা তাগাবুন, আয়াত ১৬)।
সূরা হাশরে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় করো। বস্তুত প্রত্যেক নিঃশ্বাসগ্রহণকারীর অবশ্যই লক্ষ করা (এবং ভাবা) উচিত যে, কালকের জন্য অর্থাৎ আখেরাতের জন্য) সে কি প্রেরণ করল (পাথেয় ব্যবস্থা করল)। আর (তোমাদের বারংবার তাকাদা করা হচ্ছে যে,) আল্লাহকে ভয় করতে থাক। বস্তুত এ কথা নিশ্চিত যে, আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় ভ‚ত-ভবিষ্যৎ কৃতকর্ম সম্পর্কে সম্যক অবগত (তোমাদের কোনো কর্ম তার কাছে গোপন নেই)। (সূরা হাশর : আয়াত ১৮)।