26 C
Dhaka
এপ্রিল ৩০, ২০২৫
Bangla Online News Banglarmukh24.com
ইসলাম ধর্ম প্রচ্ছদ

বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরিতে ইসলামের নির্দেশনা

মানুষের পাস্পরিক সুসম্পর্কের মাধ্যমে তৈরি হয় বন্ধুত্ব। বন্ধুত্ব ছাড়া ব্যক্তি পরিবার সমাজ কার্যত কোনোটিই চলতে পারে না। সুন্দর ও উন্নত সমাজ বিনির্মাণে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই বন্ধুত্বের গুরুত্ব যেমন বেশি তেমনি বন্ধুত্ব বা সুসম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্ব তারচেয়ে বেশি।

কুরআন সুন্নাহ ও ইসলামের ইতিহাসে বন্ধুতের মর্যাদা, গুরুত্বের ব্যাপারে রয়েছে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা। যা মানুষকে সফলতার পথ দেখায়। বন্ধুত্ব সম্পর্কে ইসলামের দিক-নির্দেশনার রয়েছে সুস্পষ্ট তথ্য। আর তাহলো-

ভালো বন্ধু নির্বাচনে আবশ্যকতা ও করণীয়

বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুর। কারো সম্পর্কে না জেনে যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করা ঠিক নয়। কেননা সাধরণ মানুষ বন্ধুর স্বভাবের অনুকরণ করে থাকে। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষ তার বন্ধু স্বভাবী হয়, তাই তাকে (মানুষের) লক্ষ্য করা উচিত, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।’ (তিরমিজি)
সত্যবাদী, নামাজি, দ্বীনদার ও পরোপকারী ব্যক্তিই হতে পারে মানুষের সর্বোত্তম বন্ধু। তবেই তৈরি হবে সুন্দর সমাজ।

উত্তম বন্ধুর উদাহরণ এমন-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বন্ধুত্বের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘সৎ সঙ্গী এবং অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হচ্ছে আতর বিক্রয়কারী এবং কামারের হাপরের ন্যায়। আতরওয়ালা তোমাকে নিরাশ করবে না। হয় তুমি তার কাছ থেকে (আতর) কিনবে কিংবা তার (আতরওয়ালার) কাছে সুঘ্রাণ পাবে। আর কামারের হাপর, হয় তোমার বাড়ি জ্বালিয়ে দেবে, নচেৎ তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে আর তা না হলে তার কাছে দুর্গন্ধ পাবে।’ (বুখারি)

কুরআনে বন্ধু নির্বাচন

বন্ধু নির্বাচনের সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা এসেছে কুরআনে। আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লক্ষ্য করে নির্দেশনা দেন-
‘(হে রাসুল!) আপনি নিজেকে তাদের সংস্পর্শে আবদ্ধ রাখুন, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে এবং আপনি দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে অবচেতন করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার আনুগত্য করবেন না।’ (সুরা কাহাফ : আয়াত ২৮)

এ আয়াতে ভালো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করার দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যাতে এক বন্ধু অপর বন্ধুর ভালো কাজে আগ্রহী হয়ে ওঠবে। তৈরি করবে সুন্দর ও আদর্শ সমাজ।

বন্ধু নির্বাচনে অগ্রাধিকার

বন্ধু নির্বাচনে অগ্রাধিকার পাবে ওই সব মুমিন ব্যক্তি, যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে চলাফেরা করে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ১১৯)

ভালো বন্ধু থাকার উপকারিতা

প্রবাদ আছে, ‘সৎসঙ্গ স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গ সর্বনাশ’। পরস্পর সুসম্পর্ক বজায় রাখলে আরশের ছায়ায় স্থান পাবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবি-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘আমার মর্যাদার (আনুগত্যের) কারণে পরস্পরের বন্ধুত্ব স্থাপনকারীরা আজ কোথায়? আমি তাদেরকে আজ আমার ছায়া তলে আশ্রয় দেব। যেদিন আমার ছায়া ব্যতিত আর কোনো ছায়া থাকবে না।’ (মুসলিম)

এ কারণেই মানুষের উচিত ভালো বন্ধু নির্বাচন করা। ঠিক যাদেরকে বন্ধু বানাতে বলেছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি বলেছেন, ‘মুমিন ব্যতিত অন্য কাউকে সঙ্গী বা বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না।’ (তিরমিজি)

যাদের সঙ্গে মুমিনের বন্ধুত্ব নয়

আবার যাকে তাকে বন্ধুরূপে গ্রহণেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। যার ঈমান নেই, তার সঙ্গে মুমিন বন্ধুত্ব হবে না। এ ব্যাপারে রয়েছে কড়া দিক-নির্দেশনা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোনো কাফিরকে (অবিশ্বাসী) বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। আর যারা এরূপ করবে, আল্লাহর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ২৮)

ভালো বন্ধুর গুণাবলি

একজন ভালো বন্ধুর কী কী গুণ থাকা জরুরি। যে গুণের কারণে অন্য একজন তার সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করবে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে ভালো বন্ধুর সেসব গুণ তুলে ধরেছেন। আল্লাহ বলেন-
‘আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তা’আলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী। (সুরা তাওবা : আয়াত ৭১)

বন্ধুত্ব স্থাপনে ইসলামিক স্কলারদের দিক-নির্দেশনা

– হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘নির্বোধ কিংবা বোকা মানুষের বন্ধুত্ব থেকে দূরে থাকো। কারণ সে উপকার করতে চাইলেও তার দ্বারা তোমার ক্ষতি হয়ে যাবে।’
– হজরত ইমাম জাফর আস-সাদিক রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘পাঁচ ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব করা সমীচীন নয়। তারা হলো-
> মিথ্যাবাদী।
> নির্বোধ।
> ভীরু।
> পাপাচারী ও
> কৃপণ ব্যক্তি।’

– হজরত ইমাম গাজ্জালি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, ‘যার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে তার মধ্যে পাঁচটি গুণ থাকা চাই। আর তা হলো-
> বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ব্যক্তি।
> সৎ স্বভাবের অধিকারী।
> পাপাচারী না হওয়া।
> বেদআতি (ইসলামে নতুন ধারার প্রবর্তক) না হওয়া এবং
> দুনিয়ার প্রতি আসক্ত না হওয়া।’

সুতরাং পরকালের কল্যাণে সুসম্পর্ক তৈরি করা কিংবা বন্ধুত্ব গড়ে তোলা উত্তম। আর তাতেই প্রতিটি মানুষ হয়ে উঠবে পরিপূর্ণ ঈমানদার। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছোট্ট একটি দিক-নির্দেশনাও এমন। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-
‘যে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে (কাউকে) ভালবাসে এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঘৃণা করে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে দান করে কিংবা দান থেকে বিরত থাকে, সে যেন তার ঈমানকে পরিপূর্ণ করে নিল।’ (আবু দাউদ)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে পারস্পরিক সুসম্পর্ক তৈরি করে একে অপরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। পরকালের সুন্দর জীবন লাভে বন্ধুত্ব ও পাস্পরিক সুসম্পর্ক তৈরি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সম্পর্কিত পোস্ট

আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ

banglarmukh official

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার সেই শিশু মারা গেছে

banglarmukh official

জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকায়

banglarmukh official

বরিশালে দুর্ঘটনায় নিহত ২

banglarmukh official

পাকিস্তানে ট্রেনে জিম্মি দেড় শতাধিক যাত্রী উদ্ধার, ২৭ সন্ত্রাসী নিহত

banglarmukh official

পাকিস্তানে যাত্রীবাহী ট্রেন হাইজ্যাক, জিম্মি শতাধিক

banglarmukh official